বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ অপরাহ্ন
মোঃ ইশারাত আলী :
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এর বিরুদ্ধে সমিতির সদস্যদের সঞ্চয়ের লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সমিতির সদস্য অমুল্য সরকার জেলা সমবায় কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগটি তদন্তে প্রমানিত হলেও পরবর্তীতে কোন বিহিত হয়নি।
অভিযোগ কারির অভিযোগে তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ রেজিঃ নং ২৪/সাতঃ তারিখ ২৮/০৭/২০০৩ খ্রিঃ সংশোধিত রেজিঃ নং ও তারিখ ১৯/সাত, তারিখ ০২/০১/ ২০১৩ খ্রিঃ ২০ জুন ২০২২ তারিখে সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০০২ ও ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সংশোধিত ২০২০) লঙ্ঘন করে গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকা ফেরৎ দেয়নি।
অথচ গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি গোবিন্দকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পশুপতি সরকার গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ না দিয়ে উল্টো ৯ বছরে ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। স্থানীয়দের প্রশ্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে সরকারের সকল বেতন ভাতাদি সুবিধা গ্রহণের পর কিভাবে তিনি সমিতি থেকে এই ২লক্ষ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করলেন?
ওদিকে অডিট অফিসার ও পরিদর্শক সুবির কুমার ঘোষ জেলা সমবায় কার্যালয় সাতক্ষীরা, তিনি বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। এবং তিনিই পর্যবেক্ষণ : ২৫ এ হস্ত মজুদ তহবিল সম্পর্কে লিখেছেন হুবুহু “অডিটকালে সমিতিতে হস্তে মজুদ তহবিলের পরিমান পাওয়া ৪,১৭,৫৪৬/-টাকা। জমা খরচ হিসাব বহি দৃষ্টে প্রদর্শিত হস্তে মজুদ তহবিলের পরিমান সঠিক। উক্ত হস্তে মজুদ তহবিলের অর্থ সমিতির প্রাক্তন সভাপতি জনাব পশুপতি সরকারের নিকট রয়েছে। এত অধিক টাকা হস্ত মজুদ রাখা তহবিল আত্মসাতের সামিল। অত্র অডিট সম্পন্নের দিন ক্যাশ বহি হাল নাগাদ ছিলনা”।
এই অডিটের পেক্ষিতে গ্রাহকদের অভিযোগ অডিট অফিসার জেনে শুনে বুঝে গ্রহকদের টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছেন।
গত ২০ বছর গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর বয়স হলেও সর্বোশেষ ৬ বছর দীলিপ সরকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক, তার আগে ৩ বছর তার স্ত্রী নমিতা সরকার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার আগে আরও ৯ বছর দিলীপ সরকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক। সর্বোসাকুল্য দিলীপ সরকার সমিতির শুরু থেকে পরিকল্পিত ভাবে আজ অবধি ২০ বছর সাধারণ সম্পাদক। সে কারনে সমিতির সভাপতি পশুপতি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার শুরু থেকেই পরিকল্পিত ভাবে ৬৭৪ জন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছে।
সমিতির বার্ষিক হিসেবে বিগত ২০ বছরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার ভাতা নিয়েছেন ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। সমিতির সভাপতি পশুপতি সরকার নিয়েছেন ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা এবং দুজন মিলে ভাউচারের বিপরীতে খরচ হিসেব দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে গ্রহকরা অভিযোগ করেছে।
হাল রিপোর্ট অনুযায়ী পোল্ট্রী প্যাকেজের ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকা, শুভংঙ্কর ৯০ হাজার ৪ শত টাকা এবং কর্জ পরিশোধের ৬ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫ শত টাকার তরল হিসেব কোথায় তার ভাউচার, কাকে দিয়েছে, কেন দিয়েছে, কিজন্য দিয়েছে, কিভাবে দিয়েছে, কবে দিয়েছে কিছুই সামনে আসেনি। অথচ অডিট অফিসার ও পরিদর্শক জেলা সমবায় কার্যালয় সাতক্ষীরা তিনি বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন।
সরেজমিন তদন্তকালে দেখা যায, সমিতির সদস্য গোপীনাথ স্বর্ণকার তিনি ৫ বছর ধরে চেষ্টা করেও ১ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ফেরৎ পাচ্ছে না। এই গোপিনাথ স্বর্ণকার তিনি ডিসি অফিস বরাবর দরখাস্ত করেছেন কিন্তু প্রতিকার পাননি। কালিগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার বরাবর দরখাস্ত করেও এখনো টাকা ফেরৎ পাননি।
টোনার কৃষ্ণা সরকার তিনি ৪৯ হাজার টাকা পাবেন কিন্তু তিনি গত দুবছরে কোন সঞ্চয় টাকা ফেরৎ পাননি। তার আক্ষেপ বাচ্চাদের পড়ালেখা চালানোর জন্য তিলে তিলে সঞ্চিত টাকা এখন প্রয়োজনে তিনি আর ফেরৎ পাচ্ছেন না।
টোনার নিতাই মিস্ত্রি সমিতির কাছে টাকা পাবেন ৭ হাজার। কিন্তু বিগত ২বছরে তিনিও কোন টাকা ফেরৎ পাননি।
পুষ্পরানী, তার বাড়ীও টোনায় তিনি ৬ বছর ধরে চেষ্টা করছেন তার সঞ্চিত ৭ হাজার টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনিও হতাশ। তিনি এখনো টাকা পাননি।
রণজিৎ মিস্ত্রি ২০১৩ সাল থেকে টাকা পাবেন। কিন্তু তার সঞ্চিত টাকা পাচ্ছে না। ধননজয় মিস্ত্রি ২০১০ সাল থেকে থেকে সমিতির সঞ্চয় দাতা। বিগত ৪ মাস ধরে তিনি তার পাওনা ১৮ হাজার টাকা উত্তোলোনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এবং তাকে তাকে টাকা ফেরৎ না দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে ভয় ভিতি দেখানো হচ্ছে।
কবিতা সরকার সমিতির কাছে টাকা পাবেন ১০ হাজার। তিনিও সঞ্চেয়র টাকা ফেরৎ চেয়ে বিগত ১ বছরে টাকা ফেরৎ পাননি।
অমুল্য সরকার সমিতির কাছে ৩০ হাজার ৭ শত ২৮ টাকা পাবেন। কিন্তু তিনিও সঞ্চয়ের টাকা ফেরৎ পাচ্ছে না।
আনন্দ ও তার বোন পাবেন ৭০ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার সঞ্চিত টাকা ফেরৎ পাননি। এরকম ৫০ জনের স্বাক্ষাতকারে ভিডিও ফুটেজে সমিতির বাকি ৬৭৪ জন সদস্যর দুরাবস্থার কথা উঠে এসেছে।
এভাবে প্রায় ৬৭৪ গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা হিসেব বিহিন অবস্থায় লুুটপাট হচ্ছে। অনেকের অভিযোগ সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার টাকা পাচার করে ইন্ডিয়ায় সম্পদ তৈরী করেছেন।
অনিয়মের শীর্ষে থাকা গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি পশুপতি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার আজ অবধি বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি, প্রতিমাসে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেনি, অডিট সংশাধনী প্রতিবেদন দেয়নি, অডিট অফিসারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করিনি, নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝে দেয়নি, শেয়ার সার্টিফিকেট দেয়নি, সমিতির জমির হিসাব দেয়নি, শেয়ারের উপর সুদ বন্টন করেনি, পুকুর লিজের নথি নেই সরেজমিনে প্রমানিত হয়েছে।
সমিতির অধিকাংশ সদস্যরা নিতান্তই খেটে খাওয়া অসহায় গরীব মানুষ। এদের কেউ ডিম বিক্রি করে এবং মুদি দোকান করে তাদের কষ্টার্জিত টাকা ভবিষ্যতে মুনাফা লাভের আশায় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে সমিতিতে সঞ্চয় জমা রেখেছিল। এই টাকা সমিতির সভাপতি-সহঃ সভাপতি-সম্পাদকসহ যারা দ্বায়িত্বে ছিলেন তারা কৌশলে তাদের টাকা আত্মসাত করার অপচেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন মর্মে অভিযোগে জানা যায়। তারা বলেন, আমরা গরীব মানুষ আমাদের টাকা ফেরত দেবার ব্যবস্থা করে দেন।
অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি সুকুমার বিশ্বাস বলেন আমি এখনো ক্ষমতা বুঝে পায়নি। আমরা বিগত ৮ মাস ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু সমিতির সভাপতি গোবিন্দকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পশুপতি সরকার ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার আমাদের হিসাব বুঝে দিচ্ছে না। একারনে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে গ্রাহকদের স্বাক্ষাতকার নেওয়ার সময় গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি গোবিন্দকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পশুপতি সরকার ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ সরকার সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন।
এব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার আকরাম হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আছে। জেলা সমবায় অফিসে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ১ মাস আগে গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এ যাই। তাদের সাথে আমার আলোচনা হয়। তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে আমাকে জানায়। কিন্ত আজ অবধি করেনি। নতুন কমিটিকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। নতুন কমিটি আইনের আশ্রয় নিলে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
এদিকে আজ নব-নির্বাচিত কমিটির পক্ষে সভাপতি সুকুমার বিশ্বাস এবং কোষাধাক্ষ্য সুভাষ চন্দ্র মন্ডল নির্বাচনের ৮ মাস পরেও ক্ষমতা বুঝে না পাওয়ার কারনে উপজেলা নির্বাহি অফিসার বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়ে তদন্ত করত ব্যবস্থা গ্রহণে আর্জি করেছেন। যার স্মারক নং ৩৫২ তাং ৩০/০৩/২০২৩ । উপজেলা নির্বাহি অফিসার রহিমা সুলতানা বুশরা বিষয়টি তদন্তর জন্য উপজেলা সমবায় অফিসার বরাবর দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
Leave a Reply