শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
ইশারাত আলী:
বাণিজ্য মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর এলাচ, জিরা, দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ সহ গরম মসলার দাম ১০-২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলো বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি।
গত মে মাসের ১৩ তারিখ বুধবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিনের সাথে সমিতির ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল এক বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেয়। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মো. ওবায়দুল আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গরম মসলার আন্তর্জাতিক বাজার ও বাংলাদেশে আমদানি মূল্য পর্যালোচনা করা হয়। সেসময় পবিত্র ঈদ উল ফিতর সামনে রেখে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায় গরম মসলার মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করে উভয় পক্ষ।
আলোচনার পর বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার মূল্য তালিকা ঘোষণা করেন। মূল্য তালিকা হলো- জিরা (ভারত) প্রতি কেজি ৩০০-৩৪০টাকা, দারচিনি (চীন) প্রতি কেজি ৩১০-৩৩০টাকা, দারচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতি কেজি ৩৫০-৩৭০টাকা, লবঙ্গ প্রতি কেজি ৬৮০-৭২০টাকা, এলাচ প্রতি কেজি ২৮০০-৩২০০টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ৫৫০-৫৮০টাকা, গোলমরিচ (কাল) ৩৬০-৩৮০টাকা।
এ ঘোষিত মূল্য তালিকায় স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ এবং মহাসচিব মো. আতিকুল হক।
আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকার এবং বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি মধ্যে স্বাক্ষর হলেও স্থানীয় বাজারে তার চিত্র উল্টো। বিক্রি কম হলেও কৃত্রিম সংকট তৈরী করে মসল্লার দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে দোকানদাররা। ঈদুল আযহা উপলেক্ষে বাজারে আরেক ধাপ দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশে ঈদসহ যে কোনো উৎসবকে ঘিরে পণ্যের দাম বাড়ানোর রেওয়াজে অনেক পুরানো। তবে করোনা মহামারী কারণে গত রোজার ঈদে সে সুযোগ মেলেনি। সেকারনে কোরবানীর ঈদে সেই ব্যবসায়িক লাভ পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে দোকানদাররা।
আজ সোমবার সাতক্ষীরার অনেক বাজার ঘুরে দেখা গেছে মসলার বাজার দর আকাশমুখী। কোনো কোনো মসলার ক্ষেত্রে কেজি প্রতি দাম বেড়েছে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। ক্রেতাদের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকার পরও দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেননি ব্যবসায়িরা।
কালিগঞ্জ বাজারের এক পাইকারি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মসলার দাম এই সময়ে তো এমনিই বাড়ে। এবারও বাড়ছে। কিন্তু মসলার যে খরিদ্দার থাকার কথা, সেটা নেই। যেকারনে খরিদ্দার পেলে পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।এরকম অবস্থা পুরো সাতক্ষীরা জুড়ে।
জিরোনগাছা বাজারের ব্যবসায়ী নিরঞ্জন বলেন, ‘আমাদের কিছু নিয়মিত খোদ্দের আছে। তাদের অনেকেই কোরবানি দিবেনা একারনে তারা ঈদের আগে কোন মসলা কিনছেনা।
বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচির দাম কেজিতে দুই থেকে তিনশো টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারী বাজারে এলাচি চার হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এলাচির কেজি সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে সাড়ে চার থেকে পাঁচশো টাকায়। লবঙ্গ পাইকারিতে সাড়ে সাতশো থেকে ৮০০ টাকা। খুচরা বাজারে হাজার টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১১০ টাকা, হলুদ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, শুকনা মরিচ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অথচ বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার মূল্য তালিকা অনুযায়ী দাম হলো- প্রতি এক’শ গ্রাম জিরা ৩০ টাকা, দারচিনি (চীন) প্রতি এক’শ গ্রাম ৩১টাকা, দারচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতিএক’শ গ্রাম ৩৫ টাকা, লবঙ্গ প্রতি এক’শ গ্রাম৬৮ টাকা, এলাচ প্রতি এক’শ গ্রাম ২৮০টাকা, গোলমরিচ (সাদা) প্রতি এক’শ গ্রাম ৫৫ টাকা, গোলমরিচ (কাল) প্রতি এক’শ গ্রাম ৩৬ টাকা।
করোনা ভাইরাসে আপোদ কালিন সময় অতি সম্প্রতি মসলার ব্যবহার বেড়েছে। তবে বাজারে তার সংকট নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দামও বাড়েনি বরঞ্চ কমেছে। তার পরেও সাতক্ষীরার বাজার চিত্র আলাদা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সাথে বাংলাদেশ পাইকারী মসলা ব্যবসায়ী সমিতির বৈঠকে মসলার যে দাম নির্ধারণ করেছে তার বাস্তবায়ন চায় সাতক্ষীরার বাসী। সাথে সাথে বিষয়টি নিরসনে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সকল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও হস্তক্ষেপ করেছে স্থানীয় ক্রেতারা।
Leave a Reply