বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আইন–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমার প্রথম কাজ: ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের নাম প্রস্তাব শিক্ষার্থীদের ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান রাষ্ট্রের যেকোন প্রয়োজনে সবসময় সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে সাতক্ষীরায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারিদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ কালিগঞ্জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ বক্তব্য কাটছাট করে আপত্তিকর মনগড়া ও মানহানিকর সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবে ইউপি চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন কালিগঞ্জে মুজিব কিল্লা উদ্বোধনের ৭ মাসের মধ্যে প্লাস্টার খসে পড়া শুরু করেছে PRERONA, Kaligonj, Satkhira-4 Vacancy সাতক্ষীরা ৪ আসনে ভোটারদের হিসেব নিকেষ শ্রীকলায় গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল এর উঠোন বৈঠক
গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের মামলা

গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের মামলা

মোঃ ইশারাত আলী :
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সঞ্চয়ের টাকা তুলতে না পেরে আদালতে মামলাও করেছেন ওই সমিতির সঞ্চয়কারীরা। মামলা নং সি আর ২২৭/২৩ কালিগঞ্জ। মামলার বাদী আনন্দ মোহন মিশ্র। মামলাটির তদন্ত করছেন পিবিআই।
সরেজমিন, মামলার নথি ও সমিতির গ্রাহক সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে ২০০৩ সালে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন পায়। যার নিবন্ধন নম্বর সংশোধিত ১৯/সাত। বর্তমান সমিতির সদস্য সংখ্যা ৬৭৪ জন হলেও তাদের সঞ্চিত টাকা ফেরৎ দেওয়া হচ্ছেনা। বিগত ৫ বছর ধরে সমিতির সভাপতি পশুপতি সরকার ও দিলীপ সরকার ৫৩ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩০৭ টাকা নামে বেনামে সুকৌশলে আর্তসাৎ করেছেন।
বিজ্ঞ কালিগঞ্জ আমলী ০২ নং আদালত, সাতক্ষীরা মামলার বাদী আনন্দ মোহন মিশ্র বলেন গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি পশুপতি সরকার গ্রাহকদের টাকা ফেরৎ না দিয়ে উল্টো ৯ বছরে ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা সুবিধা গ্রহণ করেছেন। আমাদের প্রশ্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে সরকারের সকল বেতন ভাতাদি সুবিধা গ্রহণের পর কিভাবে তিনি সমিতি থেকে ২লক্ষ ১৬ হাজার ভাতার টাকার সাথে ৩০ লক্ষ টাকা আর্তসাৎ করলেন?
আমি একা সঞ্চয়ের টাকা পাবো ১,২৪,০৭৪ (এক লক্ষ চব্বিশ হাজার চুহাত্তর) টাকা পাবো। মামলার স্বাক্ষী ১২ জন মিলে পাবো ৪,০৬,৭৯২ টাকা। বর্তমানে ৬৭৪ জন সদস্য। এর মধ্যে ২৫৪ জন মহিলা সদস্য এবং ৪২০ জন পুরুষ সদস্য। তাদের সঞ্চিত টাকার পরিমান ৫৩৯৬৩০৭টাকা। বর্তমানে সঞ্চিত টাকা গ্রাহকদের ফিরিয়ে না দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছে।
গ্রাহকদের ২৫৪ জন মহিলা সদস্যর মধ্যে মাত্র ৬৬ জন মহিলা সদস্যর সঞ্চয় টাকা ১৬ লক্ষ ৮৩ হাজার। অথচ তাদের প্রয়োজনে সঞ্চয় টাকা বিগত ৫ বছর যাবৎ ফেরৎ দেওয়া হচ্ছেনা।
এছাড়া ২০১৮-১৯ সালের অডিট রিপোর্টে ৪,৭৮,০০০ হাজার টাকা, ২০২১-২২ সালের অডিট রিপোর্টে ৪,১৭,৫৪৬ টাকা, কর্জ পরিশোধ বাবদ পোল্ট্রি প্যাকেজ থেকে উত্তোলন করা ৬,৯৬,৫০০ টাকা এবং অন্য দপ্তরে চাকুরী করার পরও সভাপতি পশুপতি মন্ডলের গ্রহণ করা ২,১৭০০০ হাজার টাকা সহ ৩০ লক্ষ টাকা বার্ষিক রিপোর্ট ও গ্রাহকদের সঞ্চয় বইতে গরমিল হিসেব ধরা পড়েছে। যা সমিতির সভাপতি পশুপতি সরকার ও দীলিপ সরকারের ভাগ বাটোয়ারার করেছেন বলে গ্রাহকরা বলেছেন।
গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর ২০২২ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে নবনির্বাচিত কমিটির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি বিগত কমিটির সভাপতি পশুপতি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার। কোন আইনে এবং কোন খুটির জোরে তারা বহাল তবিয়তে আছে তা আমরা আজও জানতে পারিনি।

গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে জেলা সমবায় অফিস বরাবর দরখাস্ত করা হলেও প্রতিকার পায়নি গ্রাহকরা। তাদের প্রশ্ন সমবায় আইন অনুসারে নবনির্বাচিত কমিটি নির্বাচনের ১৫ দিনের মধ্যে যদি ক্ষমতা বুঝে না পায় তবে পূর্ববর্তী কমিটি বিধান অনুসারে বিলুপ্ত হবে। এবং এ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সে হিসেবে এই ৮ মাস কারা গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ কুঙ্খিগত করে চালাচ্ছে এবং লুটপাট করেছে তা কেবল কালিগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার আকরাম হোসেন জানেন।
গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি পশুপতি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দীলিপ সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন তা জেলা সমবায় অফিসার অবগত। বিগত ২০১৮-২০১৯, অর্থ বছরের রিপোর্টে অডিট অফিসার ও পরিদর্শক সুবির কুমার ঘোষ জেলা সমবায় কার্যালয় সাতক্ষীরা, তিনি বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। এবং তিনিই পর্যবেক্ষণ : ২৫ এ হস্ত মজুদ তহবিল সম্পর্কে লিখেছেন “অডিটকালে সমিতিতে হস্তে মজুদ তহবিলের পরিমান পাওয়া ৪,১৭,৫৪৬/-টাকা। জমা খরচ হিসাব বহি দৃষ্টে প্রদর্শিত হস্তে মজুদ তহবিলের পরিমান সঠিক। উক্ত হস্তে মজুদ তহবিলের অর্থ সমিতির প্রাক্তন সভাপতি জনাব পশুপতি সরকারের নিকট রয়েছে। এত অধিক টাকা হস্ত মজুদ রাখা তহবিল আত্মসাতের সামিল। অত্র অডিট সম্পন্নের দিন ক্যাশ বহি হাল নাগাদ ছিলনা”। অথচ তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
এর পরবর্তী অর্থবছর ২০১৯-২০২০,মোঃ আশরাফ আলী, অডিট অফিসার ও প্রশিক্ষক জেলা সমবায় কার্যালয় একই হিসেব বহাল রেখে বার্ষিক অডিট রিপোর্ট অনুমোদন করেছেন। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে মনোজিৎ কুমার মন্ডল, জেলা অডিট অফিসার ও পরিদর্শক দুর্নীতিতে ভরা অডিট রিপোর্ট অনুমোদন করেছেন। একই ভাবে ২০২১-২০২২ অর্থ বছর রিপোর্টে অডিট অফিসার ও পরিদর্শক সুবির কুমার ঘোষ জেলা সমবায় কার্যালয় সাতক্ষীরা, তিনি বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা সমবায় কার্যালয় এর অডিট অফিসার ও পরিদর্শক সুবির কুমার ঘোষ ২০১৮-২০১৯, অর্থ বছরে গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি পশুপতি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দীলিপ সরকারকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ করে দিয়ে ছিলেন বলে গ্রাহকদের অভিযাগ। তারা বলেন ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর ও সর্বোশেষ ২০২১-২০২২ অর্থ-বছর অডিট করেছেন একই অডিট অফিসার ও পরিদর্শক সুবির কুমার ঘোষ। তিনি মনে করলে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারতেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ গোবিন্দকাটি পোল্ট্রি খামার মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি পশুপতি সরকার ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার আজ অবধি বার্ষিক সাধারণ সভাডাকেনি, প্রতিমাসে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়নি, অডিট সংশাধনী প্রতিবেদন দেয়নি, অডিট অফিসারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করিনি, নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝে দেয়নি, শেয়ার সার্টিফিকেট দেয়নি, সমিতির জমির হিসাব দেয়নি, শেয়ারের উপর সুদ বন্টন করেনি, পুকুর লিজের নথি নেই সরেজমিনে জানা গেছে।

অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি সুকুমার বিশ্বাস বলেন আমি এখনো ক্ষমতা বুঝে পায়নি। আমরা বিগত ৮ মাস ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু সমিতির সভাপতি গোবিন্দকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পশুপতি সরকার ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সরকার আমাদের হিসাব বুঝে দিচ্ছে না। একারনে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার কালিগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার আকরাম হোসেনকে তদন্ত করার নির্দেশ দিলেও তার গাফিলাতির কারনে বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে বলে গ্রাহকরা জানিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2013 www.satkhiranews24.com
Hosted By LOCAL IT