সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন
ইশারাত আলী :
কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন ঘিরে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরী হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবে উল্টো চিত্র। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কারা ভোটার হচ্ছেন এখনো তারা নিজেরাই জানেনা। ভোটাররা প্রকৃত অর্থে আওয়ামীলীগের হবেন নাকি অনুপ্রবেশকারী হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে চরম বিতর্ক তৈরী হয়েছে। শুরুতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি প্রকাশ হলে সেখানে অনুপ্রবেশকারী থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হয় ঐ কমিটি। যারা ত্যাগী সিনিয়র নেতা তাদের সন্মান দিয়ে এই কাউন্সিল করা যেত কিনা তা নিয়ে আলোচনার কমতি নেই। সর্বোপরি কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের আভ্যন্তরিন গন্ডোগোল এই কাউন্সিলের মধ্যে নিষ্পত্তির সম্ভাবনা থাকলেও, আসলে বাস্তব চিত্র ক্ষিণ। একারনে অনেকে জিঙ্ঘাসা করেছে কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল-উৎসব নাকি উত্তাপে পরিনত হচ্ছে?
কথা বলতে চাইছেনা কেউ কেউ। তবে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোজাহার হোসেন কান্টু শুরু থেকে একটি অবস্থানের মধ্যে থেকে পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার অবস্থান এবং দলের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। যাতে দলের অভ্যান্তরীন অনেক বিষয় উঠে এসেছে। সার্বিক চিত্র তিনি তুলে আনলেও ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা কর্মীরা বেশ হতাশ। তারাও বেশ চুপচাপ। বিশেষ করে বিগত উপজেলা নির্বাচনের আগে বিতর্কিত কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের কারনে। তারা ভাবছে এবারও কি তাই হবে?
তারা বলছে যে, দলে অনুপ্রবেশ কারীদের অত্যাচারে ত্যাগী নেতারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। প্রকৃত অর্থে দলীয় হটকারী চরম আকার ধারন করেছে। দলের নেতারা অনুপ্রবেশ কারীদের বিশেষ অনুকম্পায় আশ্রয় দিয়ে সিনিয়ার নেতাদের হটিয়ে রেখেছে।
এসব নিয়ে অনেকবার মিটিং সিটিং হয়েছে দলীয় ফোরামে। কোন ফল আসেনি তাতে। বরঞ্চ এ সবের প্রতিবাদে কালিগঞ্জ আওয়ামীলীগের মডেল ডাঃ হযরত আলী ফেস্টুন নিয়ে কালিগঞ্জ ফুলতলা মোড়ে দাড়িয়ে নীরব প্রতিবাদ করেছে।
বিগত উপজেলা নির্বাচনের আগে বিশেষ কাউন্সিল বিতর্কের জন্ম দিলে দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারন করে। ঐ কাউন্সিলে সবচেয়ে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হলে বিদ্রোহের সুত্রপাত ঘটে। খোদ আওয়ামী পরিবার বিশেষ করে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের পুত্র ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান সুমন কুশলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ থেকে এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মেহেদী মৌতলা ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে এবং উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে।
পরবর্তীতে দলের মধ্যে থেকে পুনরায় ষঢ়যন্ত্র শুরু হয় এবং দলের যারা চালিকা শক্তি তাদের বাদ দিয়ে কাউন্সিল করার পায়তারা দৃশ্যমান হয়। যা ইতিমধ্যে চরম বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিদ্রোহীদের ক্ষমা ঘোষনা করার পরেও দলের মধ্যে কিছু সুবিধাবাদি বিতর্ক তৈরী করে পুনরায় কাউন্সিল পন্ডের পায়তারা চালাচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে খোদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে দলীয় প্রধান বরাবর অভিযোগ করেছে।
ইতিমধ্যে দলীয় কাউন্সিল নিয়ে গ্রুপিং বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। তাছাড়া বিদ্রোহীদের ক্ষেত্রে কি সিদ্ধান্ত হবে তা ৬ নভেম্বর অর্থাৎ কাউন্সিলের আগের দিন জেলা কমিটির সভার পর জানানো হবে এমন ঘোষনায় উপজেলা কাউন্সিলের পরিবেশ আরো ঘোলাটে হয়েছে।
কাউন্সিল ঘিরে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নের কমিটি পাল্টা কমিটির কোন ভোটাররা কাউন্সিলে ভোট দেবেন তা এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করিনি কর্তৃপক্ষ। তবে ইতিমধ্যে কেউ কেউ চুপিসারে ভোট বানিজ্যের দরকষাকষি শুরু করেছে বলেও কানাঘুষি চলছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা যারা খানিকটা নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে এমন দুই একজন নেতার সাথে কথা বল্লে তারা দুঃখ অনেক কথা বলেছেন, বিশেষ করে দলে অনুপ্রবেশ কারীর সংখ্যা অনেক। তাদের কারনে দলের কেন্দল প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর পরে ৭ নভেম্বরের কাউন্সিল নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। জেলার নেতা সহ সবাই জানে কারা আওয়ামীলীগ করে আর কারা করে না । কাউন্সিল ঘিরে অনেক আশা জেগেছিল যে, এবার অন্তত দলীয় কোন্দল নিরসন হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিল হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত যা হচ্ছে তাতে ভাল কিছু দেখছি। আমাদের দাবী যারা প্রকৃত দলীয় নেতাকর্মী তারাই আগামীতে নের্তৃত্বে আসুক। দলীয় নেতাকর্মীদের কাউকে বাদ দিয়ে দল গঠনের প্রক্রিয়া হবে আত্মঘাতি। অন্তত যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত তারা যেন কোন ভুল সিদ্ধান্ত না নেয়। আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।
Leave a Reply