বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন
ইশারাত আলী :
কালিগঞ্জে সংযোগ প্রত্যাশী নতুন বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছে পল্লীবিদ্যুতের মিটার সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে। সেসুযোগে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে টাউট, দালাল, বাটপাররা। কালিগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মচারী কর্মকর্তাদের যোগসাযোগে নিয়মিত হয়ে দাড়িয়েছে বিষয়টি। ক্ষমতাসীন দলের গ্রাম পর্যায়ের ঠকবাজ কিছু নেতা, টাউট, দালাল, বাটপারদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের দুর্নীতি এখন একাকার বলে জানিয়েছে গ্রাহকরা । দুর্নীতিবাজ ও বিদ্যুৎ অফিস সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নিচ্ছে এসব টাকা। তাতেই এলাকায় আলীশান বাড়ী, গাড়ী আর সহায় সম্পত্তির মালিক কেউ কেউ। লক্ষ্য তাদের একটাই টাকা আসতে হবে যেভাবে হোক। দেখার কেউ নেই। নেই কোন প্রতিকার।
কেউ কেউ বিদ্যুতের তার ঝুলিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করলেও সংযোগ পায়নি সোনার হরিণ বিদ্যুৎ মিটারের। বিষয়টি জানতে এবং জানাতে চাইলে ঐ খপ্পরবাজদের হাতে নাজেহাল হয়েছে অনেকে। মুখে নীতির ফুলঝুড়ি ঝরালেও দৃশ্যমান চরম দুনীতির বিরুদ্ধে অজানা কারনে নেতারা নীরব সাথে প্রশাসন নির্বিকার।
অথচ খাম্বার নামে তিন থেকে বিশ হাজার, একশত দশ ফুট তারের নামে এক থেকে দুই হাজার এবং সোনার হরিণ মিটারের নামে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা নাদিলে কালিগঞ্জে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
গতকাল ২৫ মে শনিবার অতিষ্ট হয়ে কালিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সাবেক পরিচালক নাজমুল ইসলাম বাবুর বাড়ী ঘেরাও করেছে দেয়া, প্রবাজপুর গ্রামের গ্রাহকরা। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ১৪ তারিখ বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ মিটার সংযোগ দেয়ার নামে ৭৩ পরিবারের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে খবর প্রকাশ হয় এবং পরে তা দুদক পর্যন্ত গড়ায়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ তারিখে নিরাপদ ঘোষ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে মকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের আবু তালেব ও রুহুল আমিন শেখ এর বিরুদ্ধে বিদ্যুতের সংযোগ ও টাকা আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে। গেল একবছর ধরে মকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের ৫৪ পরিবারের কাছ থেকে নিরাঞ্জন কুমার পাল (বাচ্চু পাল) মিটার প্রতি তিন থেকে ৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে। শ্রীকলার সাইফুল ইতিমধ্যে মিটার সংযোগ লাইন দেয়ার নামে ৩০ পরিবারের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা গড়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অথচ কোন বিহিত নেই কর্তৃপক্ষের।
এদিকে ফাঁকে ফাঁকে পত্রিকার শিরোনামে, “ফেরি করে বিদ্যুৎ সংযোগ” এর খবর পত্র পত্রিকায়, টেলিভিশনে দৃশ্যমান হলেও কালিগঞ্জে ডিজিএম এর সাথে কথা বলতে গেলে বিশেষ অনুমতি লাগে আগে থেকে। তানাহলে দরজা খোলেনা ঐ অফিসের দারোয়ান। জানতে চাইলে তারা বলে ভিতরে মিটিং চলছে। এখন দেখা করা বা যাওয়া যাবেনা। বাধ্য হয়ে অনেকে ফিরে যান বাড়ীতে।
তবে সাধারণ গ্রাহক ও বিদ্যুৎ প্রত্যাশীদের অভিযোগ ডিজিএম জিয়াউর রহমান, দালাল এবং টাকা ছাড়া কথা বলতে চাননা। অনেক গ্রাহককে তিনি তার রুম থেকে ধমকিয়ে বের করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
ইতিমধ্যে উপজেলার দেয়া, প্রবাজপুর, মথুরেশপুর, বিষ্ণুপুর, মকুন্দমধুসুদনপুর, তারালী, মৌতলা, রতনপুর, ভাড়াশিমলা, কুশলিয়া, কৃষ্ণনগর, দক্ষিণশ্রীপুর, ধলবাড়ীয়া, চাম্পাফুল, নলতার বিদ্যুৎ গ্রাহক ও বিদ্যুৎ প্রত্যাশীরা অনিয়মের বিরুদ্ধে পত্রিকায় খবর প্রকাশ ও মানববন্ধন হলেও প্রতিকার করেনি কর্তৃপক্ষ। পক্ষান্তরে তাদের আরো বেশী হয়রানী করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
পল্লী বিদ্যুতের যোগসাযোগে দেয়ার নামে উজ্বল, সুনিল, রবিউল, প্রবাজপুরের কলিম, হাবিব, খবিরউদ্দিন, শ্রীকলার সাইফুল, বিষ্ণুপুরের বাচ্চুপাল, আবু তালেব, রুহুল আমিন শেখ নাজমুল হোসেন বাবু সহ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে প্রায় ৫ হাজার মিটার বাবদ এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠলেও একেবারে কিছু জানেনা কালিগঞ্জের ডিজিএম জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা, অভিযোগ থাকলে দেন, আমরা পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে আনবো।
পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে আনুক আর যাই করুক টাউট, দালাল, বাটপারদের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের সিন্ডিকেট এখন দৃশ্যমান। তাদের খপ্পরে পড়ে কালিগঞ্জ বাসি অতিষ্ট। তার উপর লোড শেডিং, বিলে অনিয়ম সহ নানান যন্ত্রনায় অতিষ্ট গ্রাহকরা। ভিষণ-২১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রির অক্লান্ত পরিশ্রমের অন্তরায় এসব বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট স্বার্থন্বেষী মহল। সেকারনে কালিগঞ্জের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বাঁচাতে এবং প্রধান মন্ত্রি ঘোষিত ভিশন-২১ সফল করতে সকল অনিয়ম প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিবেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, প্রত্যাশা সকলের।
Leave a Reply