শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন
ইশারাত আলী :
কালিগঞ্জে সংখ্যালঘু পরিবারের ৩৩ শতক জমি দখল ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার ১০/০৭/২০১৯ তারিখ সকাল ৮টার দিকে উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের থালনা গ্রামে। বিষয়টি নিয়ে আদালতের সহাবস্থানের নির্দেশনা থাকলেও রেজাউল সরদার ও তার স্ত্রী মারুফা খাতুনের নের্তৃত্বে শাহজাহান বাহেনীর প্রায় অর্ধশত সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় সংখ্যা লঘু পরিবারের মৎস্য ঘের ও বাসার আসবাবপত্র লুটপাট করে এবং মৎস্য প্রজেক্টের মধ্যে আলাদা বেড়ী তৈরী করে।
জমির মালিক মুকুল বিশ্বাস ও হারি (লিজ) গ্রহীতা নারায়ন সরকার বাঁধা দিতে গেলে তাদের বেধড়ক পেটায় সন্ত্রাসী বাহেনীর শাহজাহান সরদার, নুরুজ্জামান সরদার, খোরশেদ সরদার, নাজু সরদার, রেজাউল সরদার, মারুফা খাতুন সহ আরো ৫০জন। পরে নারায়ণ সরকারের পরিবার তাদের উদ্ধার করতে গেলে বগিদা, রামদা, বাশের লাঠি দিয়ে তাদের পিটিয়ে ঘের থেকে বের করে দেয় এবং বলে বিষয়টি কেউ জানলে বা জানালে তাদের গুম, হত্যা অথবা ভারতে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
পরেরদিন ১১/০৭/২০১৯ বৃহস্পতিবার মামলার বাদী নারায়ণ সরকার বাদী হয়ে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ আমলী ০২ আদালত সিআরপি ৭৭/১৯নংএকটি মামলা করে। ঐ মামলায় কেন স্বাক্ষী দেবে এই অজুহাতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামলার আসামী রেজাউল সরদার, মারুফা খাতুন, নুরুজ্জামান সরদার সহ আরো ১০/১২ জন মিলে স্বাক্ষী আমজাদ হোসেন (৬০) কে পিটুনী দেয় ও তার পকেটে থাকা ১৭ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। বাকী স্বাক্ষীদের আমজেদ হোসেনের মতো অবস্থা হবে এই মর্মে হুমকী দেয়। বর্তমানে ঐ
এলাকায় সংখ্যালঘুরা শাহজাহান বাহেনীর দাপোটে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
স্থানীয় হরেকৃষ্ণ সরকার, আমজাদ হোসেন, আশুতোষ সরকার, শষীভুষণ সরকার সহ আরো অনেকে বিষয়টির সত্যতা নিয়ে আমাদের প্রতিবেদককের সাথে ক্যামেরার সামনে কথা বলেছে।
মামলার আসামী রেজাউল সরদারের স্ত্রী মারুফা খাতুনের সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন যে, আমি ও আমার স্বামী রেজাউল সরদার দুজন মিলে ১৬.৫ শতক করে মোট ৩৩ শতক জমি ক্রয় করেছি নমিতা সরকারের কাছ থেকে। আট বছর আগে দলীল হলেও আমরা দখল পাইনি। তাই আমরা আজ দখল করলাম। এসময় শাহজাহান বাহেনীর শাহজাহান রেজাউল সরদারের বাড়ী অবস্থান করছিল। তার কাছে জিঙ্ঘেস করলে তিনি বলেন, এটা খাস জমি। রেজাউলরা খাস জমিতে বসবাস করে। একারনে আমরা নমিতা সরকারের দলীল অনুযায়ী মুকুল বিশ্বাসের জমি দখল করি।
রেজাউল সরদার ও মারুফা খাতুনের ক্রয়কৃত জমির দলিল দেখতে চাইলে তারা আমাদের প্রতিবেদককে একটি ফটোকপি ও একটি মাঠপর্চা দেয় এবং ঐ দলীলে জমির যে চৌহদ্দী উল্লেখ আছে সে মতে রেজাউল ও তার স্ত্রী নিজের জমিতে বসবাস করছে বলেও স্বীকার করে। তার পরেও তারা সংখ্যালঘু হওয়ার সুযোগে ঘটনাটি ঘটাচ্ছে বলে মনে করে স্থানীয়রা।
জমির মালিক মুকুল বিশ্বাস বলেন থালনা মৌজায় পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত আমার ১ একর ১৪ সম্পত্তি। এস এ রেকর্ডের মালিক আমার দাদু সুখময় বিশ্বাস সুত্রে বাবা পরেশ বিশ্বাস কাকা রনজিৎ বিশ্বাস থেকে খতিয়ান সুত্রে আমি জমির মালিক। আমি থালনার নারায়ন সরকারকে তিন সনে মেয়াদী লিজ দেই। হটাৎ বুধবার সকালে রেজাউল সরদার, উজ্জল, শাহজাহান সরদার সহ আরো ৪০/৫০ জন যেয়ে নারায়ন সরকারের ঘেরে লুটতরাজ করে, তাকে মারধোর করে। আমি মাননীয় এডিএম সাহেবের নির্দেশনা থানায় অভিযোগ হিসেবে দাখিল করি। থানার ডিউটি অফিসার এএসআই লিটন গ্রাম পুলিশ শিবপদ সরকারকে রেজাউল সরদারের বাড়ী পাঠায়। রেজাউল গংরা বলে আমরা কোন সংঘাতে যাবনা। তারপরেও তারা আজ আমার জমির লিজ গ্রহিতা নারায়ণ সরকারের ঘের জবরদখল, লুটপাট করেছে। আমি সংখ্যা লঘু। একারনে কি তারা আমার ঘের জবর দখল করলো। আমি আইন প্রয়োগকারী সকল কর্তৃপক্ষের কাছে এর বিহিত চাই।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চাম্পাফুলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঠাকুর দাশ সরকারের সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন ঘটনাটি সত্য। আমি আমার পরিষদের গ্রামপুলিশ শীবপদ সরকারকে পাঠিয়ে ছিলাম। তারা আমার কথা শোনেনি। বিষয়টি নিয়ে ওসি সাহেবের সাথে কথা বলেছি। উনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
বর্তমানে জবর দখলের ঘটনাটি কেন্দ্র করে থালনায় সংখ্যা লঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ঘটনাটির দ্রুত নিস্পত্তি হলে সন্ত্রাসী রেজাউল ও শাহজাহান বাহেনীর হাত থেকে রেহায় পাবে সংখ্যালঘু এলাকাবাসী।
Leave a Reply