March 9, 2025, 2:59 pm
মোঃ ইশারাত আলী :
সড়কে কার্পেটিং শেষ হয়েছে ২৪ দিন। পাথর ঝরে যাচ্ছে। ঢালে ঢালে পিচ উঠে যাচ্ছে। এলজিইডি উপসহকারী প্রকৌশলী গৌরঙ্গ কুমার বিশ্বাস বলেন, এরকম হওয়ার কোন সুযোগ নাই। তিনি উল্টো প্রশ্ন করলেন চাংড়া উঠে যাবে কেন? অথচ তিনি নিজে উপস্থিত থেকে কাজ দেখাশুনা করেছেন।
জনগুরুত্বপূর্ণ কালিগঞ্জের কুশলিয়া ইউনিয়নের ঠেকরা চৌমুহনী থেকে খেজুরতলা (১২০০-৩৩৮০ মিটার) লম্বা ৩মিটার চওড়া সড়কটির টেন্ডার আইডি ৭৭২৮১৯, টেন্ডার প্রকাশ হয় ১১ জানুয়ারী ২০২৩ সালে। কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল। কাজ শেষ করার তারিখ ৪ জানুয়ারী ২০২৪ সাল হলেও আরও ১ বছর ১মাস পরে ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম ২০২৫ সালের জানুয়ারী মাসের ৩১ তারিখ সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ করেছেন। ঠিকাদার কাজের কোন বর্ধিত মেয়াদ তৈরী করেছে কিনা তেমন কোন ডকুমেন্ট তারা দেখাতে পারিনি এমনকি উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন নিজেও বলতে পারিনি। ঠেকরা চৌমুহনী থেকে খেজুরতলা (১২০০-৩৩৮০ মিটার) সড়কটির প্রজেক্ট কোর্ড ২৮৭৪৭৪০০৩। সড়ক নির্মানের বাজেট ১ কোটি ৮৯ লাখ ২৫ হাজার ১ পয়সা। সড়কটির নির্মান পরবর্তী ঝুকি বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
ঠেকরা চৌমুহনী থেকে খেজুরতলা বাজার পর্যন্ত সড়কে করুণ দশার একটি দৃশ্য এলাকাবাসী হাত দিয়ে কার্পেটিং ঢালাই তুলছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে কালিগঞ্জে সমালোচনার ঝড় উঠে। কালিগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশল অফিসের দুর্নীতি নিয়ে হাসাহাসি হয়। এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে, সড়কে নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করেছে। সেকারনে কাজ শেষ হতে না-হতেই সড়কের বেশীরভাগ অংশের পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) উঠে যাচ্ছে। বালি, পাথর, বিটুমিনসহ সড়ক নির্মান কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তার অভিযোগ করেছে। অভিযোগে তারা আরও বলেছে যে, সড়কের পাশে কোন মাটি নেই, পাশে দেওয়াল নেই। এমনকি সড়ক কার্পেটিং করার সময় পোড়া মোবিল ব্যবহার করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন গেলে ঠেকরা তুলাকাটি এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, রাস্তার খুব খারাপ অবস্থা। এখনই রাস্তার পাথর মুড়ির মতো উঠে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে রাস্তা যদি পুনরায় সঠিক নিয়মে কার্পেটিং না করা হয় তাহলে আমরা সবাই ভোগান্তিতে পড়বো। আমরা কাজের সময় তাদের বারবার বলেছি সড়কে কম্প্রেশার ঠিক করতে। সঠিক নিয়মে কাজ করতে। তারা তা করেনি। বিটুমিন নাকি পোড়া মোবিল ব্যবহার করছেন? একথা জিঙ্গেস করলে আমাদের অপমান করে বের করে দিয়েছে। বর্তমানে সড়কে এমন করুণ দশা।
স্থানীয় শাহিনুর রহমান বলেন, ভাল কাজ হয়নি, সড়কের ধারে মাটি দেয়নি। সড়কটি থাকবেনা। সরকারী খালের মাটি দিতে তাদের অনিহা কেন আমরা বুঝতে পারলামনা। কাজের সময় তাদের কিছু বল্লে তারা আমাদের চাঁদাবাজ মামলার ভয় দেখিয়ে হাকায়ে দিয়েছে। আমরা মামলার ভয়ে আর কথা বলতে পারিনি। স্থানীয় ঠেকরা রহিমপুর গ্রামের সাবেক মেম্বর নাসির উদ্দিন বলেন যে, এমন কোন অনিয়ম নেই যে, তারা এই সড়কে করেনি। কার্পেটিং করার ২৪ দিনের মাথায় রাস্তা ফুড়ে ঘাস উঠেছে। আমরা তখন কাজটি সঠিকভাবে কাজ করার কথা বললেও ঠিকাদার এড়িয়ে গেছে। এখন রাস্তায় চাংড়া উঠে যাচ্ছে।
সড়কে ২.১৮ কিলোমিটার ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের বিটুমিন, বালি, পাথরের মিশ্রণে কাজ করা রাস্তাটিতে মটর বাইক রাখলে সড়কে স্ট্যান্ট বসে যাচ্ছে। সড়কে পিচ, বালি, পাথর কোথাও চাংড়া আকারে উঠে যাচ্ছে আবার কোথাও মুড়ির মতো ঝরে যাচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেনকে জানালে তিনি বলেন আমি সাতক্ষীরায় মিটিংয়ে আছি। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নেব।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুজা মন্ডলকে ভিডিও ফুটেজ পাঠালে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন আমি আজ অথবা আগামীকাল উপজেলা প্রকৌশলীকে নিয়ে সড়কটি ভিজিট করবো। কেন এমন হলো উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জবাব দেবেন।##
Leave a Reply